বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি, কালের খবর : বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকেই মাসে ১০ লাখ টাকা ঘুস আদায়ের অভিযোগ উঠছে সদ্য ঘুসের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ট্রাফিকের এক টিআইকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ক্লোজ হওয়া সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী আকনের বিরুদ্ধে। তাদের ক্লোজ করে বুধবার পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরিশাল সদর) ফরহাদ হোসেন সরদার। সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলীকে ক্লোজ করার পর মুখ খুলতে শুরু করছেন ভুক্তোভোগীরা। তারা জানান, বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী মাসে ১০ লাখ টাকা ঘুস আদায় করেন। তাদের কাছ থেকে পাশ নিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক (অটোরিকশা), মাহেন্দ্রা, (থ্রি-হুইলার) ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, পিকআপ, ট্রাক, বড় ট্রাক ও ট্রলি। সূত্র বলছে, মোটরসাইকেলপ্রতি আসাদ ও আইয়ুব আলীকে দিতে হয় মাসে ৫০০ টাকা করে। মাহেন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) থেকে ১ হাজার, অটোরিকশা থেকে ৫০০, পিকআপ থেকে ১ থেকে ২ হাজার, ছোট ট্রাক থেকে ২ হাজার, বড় ট্রাক থেকে ৩ হাজার, ট্রলি থেকে ২ হাজার টাকা করে। একাধিক থ্রি-হুইলার চালকের সঙ্গে বুধবার কথা বললে তার সত্যতা পাওয়া যায়। জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে এক থ্রি-হুইলার চালক জানান, নতুন গাড়ি রাস্তায় নামাতে হলে ২৫শ’ টাকা দিয়ে নাম লেখাতে হবে। এরপর থেকে মাসে ১ হাজার করে চাঁদা দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করেন তারা। বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ী জানান, মাল বোঝাই ট্রাক, পিকআপ থামিয়েও টাকা উত্তোলন করেন ওই দুই পুলিশ। তিনি আরও জানান, তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে কয়েক শতাধিক গাড়ি, যা থেকে তারা নিয়মিত মাসিক হারে টাকা উঠান।
লিবুখালী ফেরিঘাট সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫শ’ গাড়ি যাতায়াত করে। ওই সূত্র জানায়, বেশির ভাগ গাড়ি থেকেই সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী টাকা আদায় করতেন। তরমুজ ব্যবসায়ী সমির হাওলাদার জানান, তরমুজের ভরা সিজনে ট্রাকপ্রতি ১ হাজার করে টাকা আদায় করছেন সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী। একই ভাবে জাটকা ইলিশ মাছ বোঝাই ট্রাক টাকার বিনিময়ে যাতায়াত করতে সহায়তা করতেন সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টিএসআই আইয়ুব আলী কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, ঘুসের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ট্রাফিকের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়-যা মেটাতে গিয়ে ৩০ এপ্রিল ট্রাফিকের টিআই ফিরোজ প্রধানকে সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনা প্রাথমিক প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার সার্জেন্ট আসাদ ও টিএসআই আইয়ুব আলীকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন বরিশাল জেলা পুলিশ।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরিশাল সদর) ফরহাদ হোসেন সরদার কালের খবরকে জানান, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে প্রয়োজনে বিভাগীয় মামলা করা হবে।